আপেল এর উপকারিতা লিখে শেষ করার মতো নয়। তবুও আমি আপনাদের সাথে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি আপেলের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো। আপেল আমাদের সবার অতি পরিচিত একটি ফল। আপেল দেখতে যেমন সুন্দর আবার খেতেও তেমনি স্বাদের একটি ফল।
আপেল পরিচিতি
কথায় আছে খালি পেটে জল আর ভরা পেটে ফল। খাবার খেয়ে পেট ভরানো আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। খাবারের মানের দিকেও আমাদের খেয়াল রাখা দরকার । না হলে আমাদের মূল্যবান শরীর হয়ে যাবে রোগের কারখানা ।
২০০৪ সালে আমেরিকায় গবেষণা করা হয় ১০০ টির বেশি খাবার নিয়ে। খাবারে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর পরিমান জানতে গবেষনা টি চালানো হয়। আপেল রয়েছে ১২ তম স্থানে। বলা হয়, দুনিয়ায় আপেলের যত প্রজাতির ফল রয়েছে , আর অন্য কোনো ফলের এতো এতো প্রজাতি নেই।
আপেল আমাদের দেশের জলবায়ুতে জন্মায় না। তাই এটি আমাদের দেশীও ফল নয়। তবুও আপেল আমাদের দেশে প্রচুর আমদানি করা হয়। প্রায় সারা বছর ধরে আমাদের দেশে আপেল পাওয়া যায়। আপেলের পুষ্টিগুণ বলে শেষ করা যাবে না।
আপেল এর উপকারিতা
ক্যান্সার রোধ করে
আপেলে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পাশাপাশি আছে, বেশি পরিমানে ‘ফ্ল্যাভোনল’ যার ফলে আপেল খেলে, আমাদের প্যাংক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ২৩% কমে যায়। আপেলের মধ্যে ট্রিটারপেনয়েডস নামক একটি উপাদানের সন্ধান পান; কর্নেল বিশ্বাবদ্যালয়ের গবেষক দল। এই উপাদানটি কোলন ও লিভার ক্যান্সার কোষ তৈরি হতে দেয় না। সুতরাং ক্যান্সার রোধ করতে আপেলের উপকারিতা অবিস্মরণীয়।
কোষ্টকাঠিন্য দুর করে
লাল আপেলের তুলনায় সবুজ আপেলে তন্তু বা ফাইবার বেশি থাকে। যার ফলে সবুজ আপেল খেলে পেটের খাবার খুব সহজেই হজম হয় আবার অধিক পরিমানে মল তৈরি হয়। তাই যাদের হজমে সমস্যা আছে অথবা মল ত্যাগে কষ্ট হয়; তারা আরাম দায়ক ভাবে মল ত্যাগ করতে পারেন। তাই পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে আপেলের উপকারিতা বুলেটের মতো।
ফুসফুস ভালো রাখে
ঠান্ডা লাগা এবং কফের সমস্যা দুর করতে আপেল বা আপেলের জুস অনেক উপকারি! এক্ষেত্রে ১ সপ্তাহে ৫টি আপেল খাওয়া উচিত। কারন যারা সপ্তাহে অন্তত ৫টি করে আপেল খান; তাদের ফুসফস অন্যদের তূলনায় বেশ ভালো থাকে।
দাঁত ভালো রাখে
যারা দাঁতের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন, তারা নিয়ম করে প্রতিদিন একটি করে আপেল খেতে পারেন! কারন আপেল খাওয়ার সময় যে লালা নির্গত হয়; তা দাঁতের ক্ষয় হওয়ার থেকে রক্ষ করে! তাই দাঁত ভালো রাখতে আপেলের উপকারিতা অনেক।
ডায়াবেটিক্সে
আমরা হয়তো অনেকেই ভাবি আপেল মিষ্টি জাতীয় ফল বলে ডায়াবেটিক্স রোগীরা আপেল খেতে পারবেন না। কিন্তু ধারণাটি মোটেই ঠিক নয়। কারণ ইউএসডিএ-এর তথ্য অনুযায়ি প্রতি ১০০ গ্রাম আপেলে রয়েছে; মাত্র ৯.৫৯ গ্রাম সুগার। ডায়বেটিক্স রোগে কোনোই প্রভাব ফেলে না। তাই আপেলের উপকারিতা বিবেচনায় রেখে; ডায়াবেটিক্স রোগী প্রতিদিন মাঝারি সাইজের আপেল নিশ্চিন্তে খেতে পারেন।
যৌন ক্ষমতা বাড়াতে
আপেলের উপকারিতা যে অনেক তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আপেলের যৌন উপকারিতার কথা না বললেই নয়। গবেষণায় দেখা গেছে যারা দিনে অন্তত ১টি আপেল ভক্ষন করেন, তাদের যৌন শক্তি অন্যদের তুলনায় অধিক। এর জন্য দৈনিক খাদ্য তালিকায় ১ টি করি আপেল রাখতেই হবে। কথায় বলে, প্রতি দিন ১টি করে আপেল খেলে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না।
আপেল খাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা:
- আমরা ফলের দোকানে অনেক দিন ধরে আপেল সংরক্ষন করে রাখতে দেখি; এটা সম্ভব হয় সিনথেটিক ওয়ক্স স্প্রে আপেলে মেশানোর কারনে।
- এই সিনথেটিক ওয়ক্স স্প্রে আমাদের জন্য খুবই ক্ষতিকর! কারন এটা আমাদের হজম হয় না।
- এটা আমাদের হজম না হলেও আমাদের শরিল এটা ঠিকই গ্রহন করে নেয়। যার ফলে আমাদের পেটে আলসার; ইনফেকশন এবং শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে।
- গর্ভবতীরা সিনথেটিক ওয়ক্স স্প্রে যুক্ত আপেল খেলে ক্ষতি হতে পারে।
- তাই আপেল খাওয়ার আগে ২০ মিনিট ফুটানো গরম পানিতে ধুয়ে নিলে কোনো ঝুঁকি থাকে না।
- আপেলের বীজে অ্যামিগডালিন নামক উপাদান থাকে। যা বেশি পরিমানে গ্রহন করলে বিষ্ক্রিয়া হয়! তাই আপেলের উপকারিতা মাথায় রেখে; আপেল খাওয়ার সময় আপেলের বীজ পরিত্যাগ করতে হবে।
আপেল স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলের মধ্যে একটি। যদিও এগুলি ভিটামিন এবং খনিজগুলিতে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ নয়, তবে এগুলি ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির একটি ভাল উত্স আপেলের বিভিন্ন উপকারিতা থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে হৃদরোগের উন্নতি এবং ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম। আপেল ওজন কমাতেও সাহায্য করতে পারে। আপনি যদি স্বাস্থ্যকর খেতে চান, আপেল একটি চমৎকার পছন্দ।