রোজার মাসে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা সারাদিন না খেয়ে রোজা রাখেন। বিস্ময়কর বিষয় হলো এতো দীর্ঘ সময় ধরে না খেয়ে থাকার ফলে তেমন কোনো শারীরিক সমস্যা তো হয়ই না বরং শরীরের বেশ কিছু উপকার হয়।
রোজা রাখার ৫টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. ধূমপান কমিয়ে দেয়ঃ যারা রোজা রাখেন তারা দিনের দীর্ঘ সময় ধরে ধূমপান করেন না। এভাবে টানা একমাস ধূমপান না করার কারণে রোজাদারদের ধূমপানের অভ্যাস অনেকটাই কমে যায়। সে সঙ্গে ধূমপানের সঙ্গে সৃষ্ট নানান সমস্যাও দূর হয়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধূমপান না করার কারণে রোজার মাসটি ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করার জন্য শ্রেষ্ঠ সময়।
২. ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ যারা ওজন সমস্যায় ভুগছেন তারা রোজার মাসে বেশ উপকার পেতে পারেন। রোজার মাসে যদি সেহেরি ও ইফতারে অতিরিক্ত ভাজা পোড়া না খেয়ে খুব সাধারণ পুষ্টিকর খাবার খাওয়া যায় তাহলে খুব সহজেই অনেকখানি ওজন কমিয়ে ফেলা সম্ভব। দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার ফলে শরীরের জমানো চর্বিগুলো ক্ষয় হতে থাকে। এভাবেই ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকে।
৩. উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগঃ রোজার মাসে যদি অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার পরিহার করা যায় এবং সেহেরি ও রাতের খাবারে তেল, চর্বি এড়িয়ে চলা যায় তাহলে রোজার মাসে খুব সহজেই উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সে সঙ্গে কমানো সম্ভব হৃদরোগের ঝুঁকিও।
৪. গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা কমায়ঃ অনেকেরই সারা বছর গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা হয়। রোজার মাসে ইফতারে তেলযুক্ত খাবার না খেলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা কমিয়ে ফেলা সম্ভব। কারণ এ সময়ে প্রতি বেলার খাবার খাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নর্ধারণ করা থাকে। ফলে প্রতিদিন নিয়মিত খাওয়ার ফলে হজমক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে।
৫. ডায়াবেটিস কমায়ঃ যারা ডায়াবেটিস সমস্যায় ভুগছেন তারা রোজার মাসে খুব সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। রোজার মাসে পরিমিত খাওয়া হয়। এ সময়ের খাবারের থেকে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে দিন। শরবতে খুব বেশি চিনি খাবেন না। তাহলে অনায়াসেই ডায়াবেটিসটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
সেহেরির পর মারাত্মক ক্ষতিকর যে কাজগুলো
সেহেরির পর কি করবেন? নিশ্চয়ই ইবাদাত বন্দেগী শেষে ঘুমাবার প্রস্তুতি নেবেন। কেউ কেউ অনেক পানি খাবেন আবার কেউ খাবেন সিগারেট, কেউ আবার টিভি দেখতে বা ফেইসবুকিং করতে বসে যাবেন। একটু ভাবুন তো, সেহেরিতে কি আপনি এমন কোনো কাজ করছেন যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর? জেনে নিন এমনই কিছু কাজ সম্পর্কে।
- বেশিরভাগ মানুষই সেহেরিটা খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েন। এ কাজটি স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। ওজন বাড়াতে এবং হজমে সমস্যা করতে বিরাট ভূমিকা রাখে। কেননা ঘুমিয়ে পড়লে আমাদের মেটাবলিজম হার কমে যায়। এতে খাবার হজমে সমস্যা হয়। সেহেরি শেষে নামায পড়ুন, অভ্যাস থাকলে কোরআন তেলাওয়াত করুন। সঙ্গে সঙ্গেই শুয়ে না পড়ে কমপক্ষে আধঘন্টা পরে বিছানায় যান।
- শুধু সেহেরির পর কেন ধূমপান সবসময়েই আপনার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। রমজান হতে পারে ধূমপান ছেড়ে দেয়ার আদর্শ সময়। সেহেরির পর ধূমপান করলে সেটা আপনাকে অনেক বেশি পিপাসায় ভোগাবে।
- সারাদিন পানি খাওয়া হবে না ভেবে অনেকটা পানি খেয়ে ফেলবেন না। এতে আপনার কোনোই উপকার হবে না বরং পেতে অস্বস্তি হবে এবং ঘুমাতে সমস্যা হবে।
- সেহেরির পর অনেকেই টিভি দেখতে বসে যান বা ফেইসবুকিং করেন। যদি আপনার খুব ভোরে কোথাও যাওয়ার না থাকে তবে এ কাজটিও বাদ দিন। ইবাদাত শেষে বিশ্রাম করুন তাতে সারাদিন রোজা রাখতে সুবিধা হবে।
- সেহেরির পরপর অনেকে গোসল করেন। গোসল শেষে অনেকেই ফজরের নামায পড়েনে। এ কাজটিও করবেন না। খাওয়ার পরে গোসল করলে হজমে সমস্যা দেখা দেয়। গোসল করতে চাইলে সেহেরির আগেই সেরে নিন।
- সেহেরির ঠিক পরপরই দাঁত মাজবেন না। খাওয়ার পর ঠিক সঙ্গে সঙ্গে দাঁত মাজলে দাঁতের ক্ষতি হয়। হাতে সময় রেখে সেহেরি সারুন। তারপর কিছুটা সময় বিরতি নিয়ে দাঁত মাজুন। ভালো করে কুলি করে নিন।
- সারাদিন চা/কফি পান করা হবে না ভেবে অনেকেই সেহেরি খেয়ে চা/কফি পান করেন। এ কাজটি মোটেই করবেন না। ক্যাফেইন শরীরকে পানিশূণ্য করে ফেলে। ফলে সারাদিন রোজা রাখায় কষ্ট হবে। একই সঙ্গে আপনার ঘুমের বারোটা বাজাবে এবং হজমেরও সমস্যা করবে।
- যাদের সকালে মর্নিং ওয়াকের অভ্যাস তারা সেহেরির পর অপেক্ষা করেন ভোর হলে হাঁটতে বের হবেন বলে। রোজার দিনে ভোরবেলাতে হাঁটলে স্বাস্থ্যহানি হবে, শরীরের উপর চাপ পড়বে খুব। হাঁটার অভ্যাস এ ক’দিন বিকাল বা সন্ধ্যায় করে ফেলুন।